সিলেট জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তীরে ছোট ছোট টিলা, সমতল ভূমি ও হাওড় সমৃদ্ধ অঞ্চল নিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। বলা হয়ে থাকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গোলাপগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী, প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জনপদ। এর পূর্বে বিয়ানীবাজার উপজেলা, পশ্চিমে দক্ষিন সুরমা উপজেলা, উত্তরে সিলেট সদর ও কানাইঘাট উপজেলার কিয়দাংশ এবং দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত । হযরত শাহজালালের (রাঃ) এর অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ বাহাউদ্দিন (রাঃ), উপমহাদেশে বৈষ্ণব ধর্মের মহান প্রবর্তক সাধক ও সংস্কারক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সহ অসংখ্য পীর আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য এ উর্বরা ভূমিতে উৎপাদিত হয় ধান, শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি মূল্যবান কৃষিজাত পণ্য। ভূগর্ভে আবিষ্কৃত হয়েছে গ্যাস-তেলের মতো মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। কৈলাশ টিলা গ্যাস ফিল্ড তারমধ্যে অন্যতম। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন এ উপজেলার হাজার হাজার প্রবাসী । সমৃদ্ধ এ জনপদের কৃষিপণ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ আর প্রবাসীদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী এ উপজেলার অনুচ্চ টিলা, সুশোভন বনাঞ্চল, নদী-বিল, হাওড়, ছড়া ও বিস্তৃত সমভূমি সহজেই ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করে। বিস্তৃত ইতিহাস-ঐতিহ্যের অধিকারী এ উপজেলার রয়েছে গৌরবময় অতীত, সমৃদ্ধ বর্তমান ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। সুদূর অতীত কাল থেকে এ অঞ্চলের বহু বরেণ্য ও কৃতী ব্যক্তিত্ব দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এখানকার প্রধান প্রধান ফসল ধান, সীম, বরবটি, টমেটো, ঝিংগা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, মূখী ও কচু ইত্যাদি।
উপজেলার নাম করণের পটভূমিঃ
গোলাপগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণের কোন প্রামাণ্য দলিল অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। তবে জনশ্রুতি ও কিংবদন্তীর উপর ভিত্তি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরা হলো। মুগল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮) এর রাজত্বকালে আনুমানিক ১৭৪০ সালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং সুবা বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান । দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিনে শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিন পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সমনে এক দীঘি খনন করান। হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণগামী সড়কটি আজ ও দেওয়ান সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে দেওয়ানের পুল নামে একটি প্রাচীন কালভার্ট আজও বর্তমান। ধারনা করা হয় এই দেওয়ানের নামানুসারেই সুরমা নদী তীরে গোলাবগঞ্জ নামে এক বাজার গড়ে ওঠে যা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে গোলাপগঞ্জ নাম ধারন করে। গোলাপগঞ্জের প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে গোলাবগঞ্জ নামটি এরই সাক্ষ্য বহন করে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস